ভন্ডূলের নতুন স্কুল
ভন্ডূলের প্রথন দিনে নতুন স্কুলে
যাওয়ার অভিজ্ঞতা বেশ জাকজমক। ভোর
বেলা আব্বু ওকে নিয়ে কিছুক্ষণ
বাড়ীর পাশের বিশাল মাঠে শরীর চর্চা
করলেন। এরপর বাসায় এসে
দুজনেই গোসল করে যখন
রেডী, বুয়া ওদের জন্য
নাস্তা নিয়ে আসলো। ইসমাইল
সাহেব নাস্তা করে ভন্ডুলকে নিজের
হাতে স্কুলের পোশাকের সাথে জুতো মোজা
পড়িয়ে ওকে একদম ফিটফাট
করে দিলেন। এরপর তিনি গেলেন
রিক্সা ডাকতে। অবশ্য স্কুলের দুরত্ব ওদের বাড়ী থেকে
হাটা পথ, তবুও তিনি
চাইলেন প্রথম দিন ভন্ডুল রিক্সায়
যাক। পথে যেতে যেতে
তিনি ভন্ডুলকে বললেন-
“মনে আছে তো
প্রতিজ্ঞার কথা?’’
‘‘হ্যা আব্বু , মনে
আছে’’ ভন্ডুলের তড়িৎ জবাব।
‘‘তবু তুমি আবার
বল ’’ আব্বু শুনতে চাইলেন।
‘‘আমি প্রতীজ্ঞা করছি
যে, জীবনে কখনও মিথ্যা কথা
বলব না, স্কুলের সকল
শিক্ষক শিক্ষিকার কথা মন দিয়ে
শুনব, সকলের সাথে ভাল ব্যবহার
করব। মিথ্যা কথা বললে অথবা
অন্যায় করলে সাথে সাথে
তার প্রায়শ্চিত করব’’ বলে ভন্ডুল হাসি
মুখে আব্বুর দিকে তাকালো।
‘‘চমৎকার’’ আব্বু ভন্ডুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন
হাসি মুখে।
‘‘শোন ভন্ডুল আমরা
আজ রিক্সা করে যা”িছ
তোমার স্কুলের প্রথম দিন উপলক্ষে। অন্যান্য
দিন তুমি হেটে হেটেই
স্কুতে যেতে পারবে, তাই
না?’’
‘‘হ্যা আব্বু, আমি
এক দৌড়ে স্কুলে চলে
যেতে পারবো।’’
‘‘গুড বয়।’’
রিক্সা এসে স্কুলের সামনে
থাকলো। আব্বু ভন্ডুলকে সোজা হেড স্যারের
র“মে নিয়ে গেলেন।
হেড স্যার আব্বুর বাল্যবন্ধু!
ক‚শল বিনিময়ের
পর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে
হেড স্যার কলিং বেল টিপে
দপ্তরিকে ডাকলেন।
‘‘হোসেন,
ওকে ক্লাশ র“মে নিয়ে
যাও। ও আমাদের নতুন
ছাত্র।’’
‘‘জী, স্যার।’’
ভন্ডুল আব্বুর দিকে তাকিয়ে কাধে
ব্যাগ নিয়ে উঠল-‘‘আব্বু
আসি, স্কুল ছুটি হলে আমি
একাই বাসায় আসতে পারব।’’
‘‘এক মিনিট দাড়াও,
এই টাকাগুলো রাখ, আজকে টিফিন
টাইমে তোমার ক্লাসফ্রেন্ডদের সকলকে চকলেট অথবা অন্য কিছু
খাওয়াবে।’’
‘‘থ্যাংক ইউ, আব্বু।’’
ক্লাসে যেতে যেতে হোসেন
ভাইয়ের সাথে ভন্ডুলের পরিচয়
হয়ে গেল। হোসেন ভাই
বলল-
‘‘দাও তোমার ব্যাগটা
আমাকে দাও।’’
‘‘না, থ্যাংক ইউ,
আমিই নিতে পারব।’’
স্কুলের বারান্দা দিয়ে হাটতে হাটতে
ওরা ক্লাসের সামনে ধামলো।
হোসেন
প্রথমে নিজে ক্লাসে ঢুকল,
হৈ হুলররত সকল
ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে বলল-‘‘প্রিয় ছাত্র ভাইয়েরা আমার, আসসালামুআলাইকুম।’’
সবাই একসাথে উত্তর
দিল-‘‘ওয়ালাইকুম আস্সালাম।’’
সকলের দিকে তাকিয়ে হোসেন
ভাই বলল- ‘‘আপনারা বেশী চিলাচিলি
করতাছেন দেইখা, হেড স্যার আমারে
পাঠাইছে, বলছে আপনাদের সবাইরে
উনার র“মে নিয়া
যাইতে।’’
হাসি মুখে সব
ছাত্রের দিকে তাকিয়ে আছে
হোসেন ভাই।
ক্লাসের সবাই একজন আরেক
জনের দিকে ভয়ে ভয়ে
তাকালো।
আয় হায় এখন
কি হবে!
‘‘কি? এখন কেমন
লাগে?’’ ভীত সকল ছাত্রদের
দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল হোসেন
‘‘ভয় পাইয়েন না, আপনাদের সাথে
একটু মজা করলাম।’’
সকল ছাত্র যেন
এক সাথে স্বস্তির নিঃশ্বাস
ফেলল।
‘‘ভাইসব’’, সবার দিকে তাকিয়ে
হোসেন ভাই এখনও হাসছে-‘‘আপনাদের সাথে আজ একজন
নতুন বন্ধুর পরিচয় করাতে নিয়া আসছি।’’
এবার দরজার দিকে
তাকিয়ে বললেন- ‘‘আসেন ভাইজান সবার
সাথে পরিচিত হন। ভিতরে আসেন।’’
ধীরে ধীরে ভন্ডুল ক্লাসর“মে ঢুকলো। একটু
একটু নার্ভাস।
ভন্ডুলের দিকে তাকিয়ে হোসেন
ভাই আবার বলল- ‘‘এই
হ”েছ আপনাদের নতুন
বন্ধু, ভন্ডুল এবং আপনাদের জন্য
আরেকটা খুশির খবর আমি আগেই
দিয়া দেই, ভন্ডুল ভাইয়ের
তরফ থেইকা আপনাদের সবাইকে টিফিন টাইমে মিষ্টি খাওয়ার দাওয়াত।’’
সেই এক মূহুর্তে
ভন্ডুল ক্লাসের সকলের বন্ধু হয়ে গেল।
ভন্ডুলের প্রথম প্রায়শ্চিত
আজ স্কুল বন্ধ।
বন্ধুরা মিলে ভন্ডুলের বাড়ীর
পাশের বিশাল মাঠে ফুটবল খেলছে।
হঠাৎ ভন্ডুলেরই এক শটে ওদের
বাসার জানালার কাঁচ ভেঙ্গে গেল।
তাড়াতাড়ি খেলা বন্ধ করে
ভন্ডুল ঘরে এসে বসে
রইল ভালো ছেলের মত,
যেন ও আজ খেলতেই
যায়নি।
এদিকে হয়েছে কি ইসমাইল সাহেব
ফিরছিলেন বাজার থেকে, পাশের বাড়ীর নূর“ল হক
সাহেবকে দেখলেন বারান্দায় দাড়িয়ে আছেন। ক‚শল বিনিময়ের
পর হক সাহেব ওকে
চায়ের জন্য ভেতরে ডাকলেন।
হক সাহেবের বারান্দা থেকে মাঠের পুরোটা
চোখে পরে, এমনকি ভন্ডুলদের
বাড়ীর পিছন দিকটাও। চা
পর্বের সময় দুজনে ছেলেদের
কাঁচ ভাঙ্গার কান্ডটা দেখলেন। ছেলেরা যে সাথে সাথেই
খেলা বন্ধ করে ভাগলো
এ নিয়ে দুজনেই হাসি
তামাসা করলেন।
কিছুক্ষণ পর ইসমাইল সাহেব
ঘরে এসে দেখলেন ভন্ডুল
পড়ার টেবিলে বসে পড়ছে। বাহ্
বাহ্ ছুটির দিনে পড়ার টেবিলে!
‘‘কি ব্যাপার ভন্ডুল,
ছুটির দিনে পড়ার দিকে
এত মনোযোগ? খেলা শেষ হয়ে
গেল এত তাড়াতাড়ি।’’
ভন্ডুল ভাবলো কাঁচ ভাঙ্গার কথা
বললে আব্বু রেগে যাবে তাই
ও বলল-“হ্যা আব্বু
তারাতারি খেলা শেষ করে
দিলাম, কালকের কিছু হোম ওয়ার্ক
বাদ আছে। তাই করতে
বসেছি।’’
‘‘হুম, ভালো, খুব
ভালো’’ মনে মনে হাসছেন
ইসমাইল সাহেব। আর অপেক্ষা করছেন
কখন ভন্ডুল বলবে কাঁচ ভাঙ্গার
কথা।
কিš‘ ভন্ডুলের কোনও
সাড়া নেই ও পড়ার
টেবিলে খুব মনোযোগী।
ইসমাইল
সাহেব হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন
‘‘ভন্ডুল বারান্দার পাশের র“মের জানালার
কাঁচ ভাঙ্গলো কিভাবে?’’
ভন্ডুল প্রথমে না শোনার ভান
করে পড়ায় আরও মনোযোগী
হল।
‘‘ভন্ডুল! কি বলছি শুনছ?’’
ভন্ডুল চমকে আব্বুর দিকে
তাকালো।
‘‘জ্বী, আব্বু।’’
‘‘জানালার কাঁচ ভেঙ্গেছে কিভাবে?’’
ভন্ডুল প্রচন্ড ভয় পেল। ঢোক
গিলে ভয়ে ভয়ে বলল-
‘‘জানিনা, আব্বু।’’
ইসমাইল সাহেব বুঝতে পারলেন ছেলে প্রচন্ড ভয়
পেয়েছে। তাই মিথ্যা কথা
বলছে। তিনি তক্ষুনি কিছু
বললেন না ভন্ডুলকে। গম্ভির
হয়ে কামরা থেকে সরে গেলেন।
আশা করছেন ছেলে কিছুক্ষণ পর
এসে সত্যি কথা বলবে।
কিš‘ রাতে একসাথে
খেতে বসেও ভন্ডুল আব্বুকে
কিছু বলল না কাঁচ
ভাঙ্গা সম্পর্কে, দুজনে প্রায় খাওয়া শেষ করলেন।
ছুটির দিনে সাধারণত দুজনে
খাওয়ার পর বারান্দায় বসেন।
চাইলে ইসমাইল সাহেব পাশের মাঠে একটু হাটেন।
কিš‘ আজ খাওয়ার পর
ভন্ডুল বারান্দায় এল না। ইসমাইল
সাহেব বুঝতে পারলেন ছেলে কাঁচ ভেঙ্গে
খুবই ভয় পেয়েছে। তিনি
ভন্ডুলকে ডাকলেন।
ভন্ডুলের চোখ মুখে এখনও
ভীতির স্পষ্ট ছাপ দেখলেন ইসমাইল
সাহেব। তিনি ভন্ডুলকে পাশে
বসালেন।
‘‘বাবা, ভন্ডুল তুমি আমাকে কিছু
বলতে চাও?’’
‘‘না, আব্বু কি
বলব?’’
ইসমাইল সাহে বুঝতে পারলেন
এভাবে কাজ হবে না।
তিনি সরাসরি জানতে চাইলেন ‘‘ভন্ডুল, জানালার কাঁচ কিভাবে ভাঙ্গলো?
ফুটবল খেলতে গিয়ে ভেঙ্গেছো?’’
ভন্ডুল তো আর জানেনা
যে ওর আব্বু একজন
প্রত্যক্ষদর্শি। ও বলল- ‘‘না,
আব্বু ফুটবল খেলতে গিয়ে ভাঙ্গবে কেন,
অন্য কোনওভাবে ভেঙ্গেছে, আমি জানি না।’’
ইসমাইল সাহেব ছেলের দিকে অবাক হয়ে
তাকিয়ে রইলেন। ছেলে মিথ্যা কথা
বলছে !
ভন্ডুল বলল ‘‘আব্বু আমি ঘুমাতে যাই।’’
‘‘না, তুমি বোস
তোমার সাথে কথা আছে’’
ইসমাইল সাহেব এখন খুবই গম্ভির।
তিনি বুঝতে পারছেন ছেলে ভয়ে মিথ্যা
বলছে। তবুও তিনি যেন
মানতে পারছেন না।
কিছুক্ষণ পর তিনি বললেন-
‘‘ভন্ডুল, তোমরা যখনে ফুটবল খেলছিলে
আমি তখন হক সাহেবের
সাথে বসে ওদের বাসায়
চা খা”িছলাম। আমি
দেখেছি কিভাবে জানালার কাঁচ ভেঙ্গেছে। জানালার
কাঁচ ফুটবল খেলে ভাঙ্গতেই পারে।
এতে আমার কোনও অসুবিধে
নেই। কিš‘ আমার ভাবতে
অবাক লাগছে যে তুমি কিভাবে
আমার কাছে মিথ্যা বললা?’’
ভন্ডুল মাথা নত করে
বসে আছে। কোনও উত্তর
নেই।
‘‘কথা বল, ভন্ডুল,
তুমি না আমার কাছে
প্রতীজ্ঞা করেছো মিথ্যা বলবা না।’’
ভন্ডুল তবু চুপ। খালি
উপরে নিচে মাথা নাড়ছে।
‘‘তাহলে মিথ্যা বললা কেন, ভয়ে?’’
এবারও ভন্ডুল উপর নিচে মাথা
নাড়ছে। হঠাৎ ইসমাইল সাহেব
জোড়ে ধমক দিলেন।
‘‘চুপ করে আছো
কেন? সত্যি কথা বল!’’
‘‘হ্যা, আব্বু আমি ভয় পেয়ে
মিথ্যা কথা বলেছি। আমি
ভেবেছিলাম তুমি জানালার কাঁচ
ভাঙ্গা দেখে রেগে যাবে,
আমাদের আর ফুটবল খেলতে
দেবে না ’’ ধমক খেয়ে ভন্ডুল
যেন এক নিঃশ্বাসে সব
বলে ফেলল।
‘‘হুম। ঠিক আছে
আমি বুঝতে পেরেছি, আমি কাঁচ ভাঙ্গার
জন্য কিছুই বলতাম না। মাঠের পাশে
বাড়ী হলে এরকম কাঁচ
প্রায়ই ভাঙ্গবে। কিš‘ আমি খুব
খুশী হতাশ তুমি যদি
আমাকে সত্যি কথাটা বলতে।’’
ভন্ডুল বলল ‘‘আর হবে না,
আব্বু।’’
‘‘ঠিক আছে, আমি
কিছু বলছি না তোমাকে
এবারের মত, তবে তোমর
প্রতীজ্ঞার কথা তোমার মনে
রাখা উচিৎ। আর কখনও প্রতীজ্ঞা
ভঙ্গ করতে হয় না।
নিজের প্রতিজ্ঞা নিজে রক্ষা কর।
আমি তোমাকে কোনও শাস্তি দেব
না, কিš‘ তুমি নিজে
নিজে প্রায়শ্চিত্ত করবে। এখন সোজা ঘুমাতে
যাও।’’
ভন্ডুল মন খারাপ করে
বিছনায় গেল। তাইতো, ও
নিজেই কিভাবে প্রতীজ্ঞার কথা ভুলে গেল।
মনে মনে ও প্রতীজ্ঞাটা
আবার করল-আমি প্রতীজ্ঞা
করছি যে জীবনে কখনও
মিথ্যা কথা বলব না।
মিথ্যা বললে প্রায়শ্চিত্ত করব।’’
হুম, কি প্রায়শ্চিত্ত
করা যায় ! ভন্ডুল ভাবছে, ভাবতে ভাবতে, কোন ক‚লকিনারা
পেল না। একসময় ঘুমিয়ে
পরল।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই
প্রথম চিন্তা এল-কি প্রায়শ্চিত্ত
করা যায়। আব্বু তখন
ঘরে নেই। ভন্ডুল নাস্তা
করে রাস্তায় বেড়িয়ে পরল। এদিক ওদিক
ঘুরে কাউকে পেল না, আজকে
যেন সবাই ব্যস্ত। নাহ,
মাঠেই খেলতে যাই।
সারাদিনেও ভন্ডুল প্রায়শ্চিত্ত করার মত কিছু
পেল না, সন্ধ্যায় যখন
বাসায় ফিরছে হঠাৎ দেখলো এক
বৃদ্ধা মহিলা রাস্তা পের“তে পারছে
না। উল্ট দিক থেকে
ভন্ডুল মহিলাকে লক্ষ্য করে দেখলো যে
মহিলা কিছুতেই রাস্তা পের“তে পারছে
না। ভন্ডুল রাস্তা পেরিয়ে মহিলার পাশে এসে দাড়াল।
‘‘কি, দাদু কোন
সমস্যা’’ ভন্ডুল জিজ্ঞেস করল। মহিলা ওর
দিকে তাকিয়ে বলল-হ্যা, বাবা,
একটা সমস্যায়ই পরেছি। সন্ধ্যা হলে আমি আবার
চোখে ভালো দেখি না।
চশমাটা ভুলে বাসায় রেখে
এসেছি। এখন কিভাবে বাসায়
যাবো বুঝতে পারছি না ’’ মহিলাকে খুবই বিব্রত মনে
হল।
‘‘কোন সমস্যা নেই,
দাদু-আমি আপনাকে হাত
ধরে নিয়ে গেলে বাসা
চিনে যেতে পারবেন তো?’’
ভন্ডুল জিজ্ঞেস করল।
মহিলা অবাক হয়ে বলল
‘‘বাহ, তুমি তো খুব
ভালো ছেলে, বাবা। তোমার বাসায় চিন্তা করবে না?’’
ভন্ডুল মহিলার হাত ধরে বলল
‘‘তা হয়ত করবে কিš‘
কোন অসুবিধা নেই। বাসায় গিয়ে
বললে আব্বু বরং খুশী হবে।
চলুন আমরা রওনা হই।
হাত ধরে ধরে
বৃদ্ধা মহিলাকে রাস্তা পার করে একটু
বাম দিকে এগিয়ে সামনে
একটা গলির মুখে মহিলা
বলল এই গলিল মাথায়
আমারা বাসা, বাবা আমি যেতে
পারবো, বাবা, তুমি এবার বাসায়
চলে যাও।’’
ভন্ডুল বলল ‘‘না, দাদু আমি
আপনাকে বাসায় পৌছে দিয়ে তারপর
যাবো, কোন অসুবিধা নেই,
আসুন যাই।’’
ধীরে ধীরে হাটতে
হাটতে দুজনে এক সময় বৃদ্ধার
বাসায় পৌছল। মহিলা ভন্ডুলকে বলল,‘‘বাবা, তুমি খুব ভালো
ছেলে, এসো ঘরের ভেতরে
এসো।’’
বৃদ্ধা হাত ব্যাগ থেকে
চাবি নিয়ে দরজার তালা
খুলে ঘরে ঢুকলো।
‘‘বাবা, তুমি একটু বোসো,
আমি আসছি।’’
‘‘না, দাদু, অন্যদিনে
আসবো, আজ যাই।’’
‘‘না, না, তা
হবে না, তুমি এত
কষ্ট করে আমাকে পৌছে
দিলে, একটু বোস, তোমাকে
চা, নাস্তা দি”িছ। ’’
‘‘না, দাদু, এখন
নাস্তা করতে গেলে দেরী
হয়ে যাবে, আজ যাই, আবার
আসবো’’
‘‘আরে একটু বোস
না, তোমার সাথে পরিচয়ই হল
না, নাম কি তোমার?
কোন স্কুলে পড়?’’
‘‘আলী আহম্মদ স্কুলে
পড়ি; ক্লাস সেভেন, নাম ভন্ডুল।’’
‘‘ বাহ, তোমাদের ক্লাসে
তো আমার নাতিও পড়ে,
চেনো নাকি? সামসুল আরেফিন বিদ্যুত।
‘‘ হাহ, বিদ্যুত আপনার
নাতি! ওহ্ খুব ভালো
হল।’’
ভন্ডুলকে বসিয়ে রেখে দাদিমা ঘর
থেকে ওর জন্য একটা
প্লেটে কয়েকটা নারকেল নার“ নিয়ে এল,
সাথে এক গ্লাস সরবত।
নার“ খেতে ভন্ডুল
খুব ভালোবাসে, ও আর না
করল না। শান্ত বালকের
মত বসে নার“ আর
সরবত শেষ করলো। বিদ্যুত
কোথায় দাদিমা?’’
দাদিমা বললেন- ‘‘ওকে নিয়েই তো
গিয়েছিলাম আমার ছোট মেয়ের
বাসায়। ছুটির দিন বলে ও
বলল দুদিন থাকবে। তাই ওকে রেখে
এলাম।’’
ভন্ডুল হঠাৎ বলল- ‘‘দাদিমা
আপনার সাথে যে আমার
পরিচয় হয়েছে তা বিদ্যুতকে বলবেন
না। ওকে আমরা পরে
সারপ্রাইজ দিব।’’
‘‘ঠিক আছে, তাহলে
তোমার দাওয়াত রইল সামনের শুক্রবার
আমরা দুজনে মিলে বিদ্যুতকে সারপ্রাইজ
দেব।’’
‘‘ঠিক আছে, দাদু
আজ তাহলে আমি যাই।’’
‘‘যাও বাবা, তুমি
খুব ভালো ছেলে, শুক্রবার
সকালে চলে এসো, সারাদিন
থাকবে।’’
দাদিমার কাছে বিদায় নিয়ে
ভন্ডুল বাসায় ফিরল। আব্বু ওর জন্য গেইটে
অপেক্ষা করছিলেন, কি ব্যাপার ভন্ডুল
এত দেরী হল আজ
ঘরে ফিরতে?’’
ভন্ডুল আব্বুর কাছে এসে দাদিমার
কথা খুলে বলল। শুনে
আব্বু খুব খুশী হলেন।
বাহ্ ভন্ডুল আজ
তুমি খুব ভালো একটা
কাজ করেছো; কালকের মিথ্যা বলার প্রায়শ্চিত্ত হয়ে
গেছে। আর চিন্তা নেই।
এখন হাত মুখ ধুয়ে
পড়তে বোস।’’
এই লেখাটি যদি পড়তে ভালো লাগে তাহলে মন্তব্য করুন প্লিজ। পরবর্তী অধ্যায় আসছে! জহির।
উত্তরমুছুননতুন পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি।
উত্তরমুছুন