বিদ্যুতের
আম্মু আব্বুর আগমন
বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। ভন্ডূলরা যখন মাঠে
বসে গল্প করছে বিদ্যুত দৌড়ে ওদের কাছে আসলো। ওকে খুব উত্তেজিত দেখাচ্ছে।
‘‘আব্বু আর আম্মু আসতাছে’’
চিৎকার করে বলে উঠলো বিদ্যুত।
ছেলেরা সবাই ‘‘হুহুররে’’
বলে খুশিতে নেচে উঠলো। বিদ্যুতের আব্বু নাজমুল আরেফিন ও আম্মু সানজীদা আরেফিন দুজনেই
ডাক্তার। এবং দুবাই এর একটা হাসপাতালে চাকরী করেন। দাদিমার জন্য বিদ্যুত এখানে থেকে
গেছে। বিদ্যুৎ এর আগে দু এক বার দুবাই বেড়াতে গেছে। কিন্তু ওর ভালো লাগেনা ওখানে। তাই
পারিবারিক সিদ্ধান্তে ঠিক হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ও বাংলাদেশে থাকবে। তারপর আব্বু
আম্মুর কাছে চলে যাবে। অথবা আব্বু আম্মু বাংলাদেশ চলে আসবে। বছরে দুবার ছুটিতে আব্বু
আম্মু বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু এ বছর বিদ্যুত আর দাদিমা দুবাই গিয়ে কিছু দিন থেকে এসেছে
বলে ওরা আর ছুটি নেয়নি।
এখন বিদ্যুতের বার্ষিক পরীক্ষার পর আব্বু
আম্মু ও লম্বা ছুটিতে আসছেন। ছেলেরা সবাই উৎফুল্ল এজন্য যে, প্রতিবার বিদ্যুতের আব্বু
আম্মু আসলে খুব মজা হয়। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া পিকনিক ইত্যাদি করে ছেলেদের সময়টা
খুব আনন্দে কাটে। বিদ্যুত বলল ‘‘আব্বু আর আম্মু কাল সকালে আসবে। দাদিমা আর আমি ছোট
খালা ও খালুর সাথে ঢাকা এয়ারপোর্ট যাবো ওদের আনতে। তোরা কাল সন্ধ্যায় আমাদের বাসায়
আসবি। সবার কাল রাতে আমাদের বাসায় দাওয়াত।’’
ভন্ডূলরা সবাই আবার চিৎকার করে উঠল!
‘‘হুরররে। হিপ হিপ হুরররে।’’
পরদিন সন্ধ্যায় সবাই গিয়ে হাজীর হল বিদ্যুতদের
বাসায়। ড্রয়িং রুমে বিদ্যুতের দাদিমার পাশে ওর আব্বু আম্মু বসে আছে।
ভন্ডূলকে দেখে ওর আব্বু এগিয়ে এসে হাত
বাড়িয়ে দিল হ্যান্ডসেক্ করার জন্য।
ভন্ডূল অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।
একটু একটু জড়তা নিয়ে ও হাত মিলাল নাজমুল
আরেফিন সাহেবের সাথে। আরেফিন সাহেব বলল ‘‘কেমন আছো, ভন্ডূল, দ্য হিরো অফ ট্রেন এক্সিডেন্ট
!’’
ভন্ডুলের জড়তা দেখে বিদুতের আম্মু ওকে
কাছে টেনে বসালেন। অন্যরা যে যেখানে জায়গা পেল বসে পড়ল। বিদ্যুতের আম্মু ভন্ডুলের কাধে
হাত রেখে বললেন ‘‘লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই হিরো। আমরা দুবাইতে বসেই পেপারে তোমাদের ট্রেন
অভিযানের কাহিনী পড়েছি ইন্টারনেটে। পরে বিদ্যুতের সাথে ফোনে কথা বলেছি। উই আর ভেরী
ম্যাচ প্রাউড ফর বোথ ওফ ইউ।’’
দাদিমা বললেন ‘‘শুধু ওদের দুজনকে নিয়ে
গর্ব করলেই হবে না। এই সব ছেলেরাই খুব ভালো, ওরা সবাই মিলে এমন একটা কাজ করেছে যে পুরো
এলাকাবাসী অবাক হয়ে গেছে।’’
দাদিমা বিদ্যুতের আব্বু আম্মুকে ভন্ডূলদের
ফুলি বাবুর আম্মাকে সাহায্যের ঘটনা বিস্তারিত বললেন।
শুনে আব্বু আম্মু দুজনেই খুব খুশী!
বিদ্যুতের আম্মু বলল ‘‘বাহ্ , আমাদের ছেলেরা
একেকটা রত্ন তৈরী হচ্ছে দেখি।
বাহ্, চমৎকার ! ’’
আরেফিন সাহেব বললেন ‘‘এজন্য তোমাদের পুরস্কার
দেয়া হবে। বল তোমরা কি পুরস্কার চাও। যা চাইবে তাই পাবে।’’
ভন্ডূলরা সবাই একজন আরেকজনের দিকে তাকাতে
লাগলো। এ আবার কেমন কথারে বাবা। পুরস্কার আবার চেয়ে নেয়া যায় নাকি। শুধুমাত্র বিদ্যুতকে
সিরিয়াস দেখাচ্ছে। ওর আব্বুর অভ্যাস জানে। ছোট বেলা থেকেই কোন কাজে খুশী হলে তিনি বলতেন
‘‘বল, তোমার কি পুরস্কার চাই!’’
বিদ্যুত আব্বু আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল
‘যা চাইবো, তাই দেবে তো! ভেবে দেখো’’ ছেলেরা সবাই চোখে প্রশ্ন নিয়ে আরেফিন
সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে।
আব্বু বললেন ‘‘অবশ্যই দেবো, বল কি চাও!’’
বিদ্যুত বলল ‘‘কালকে বলবো, আগে আমরা নিজেদের
মধ্যে আলোচনা করে নেই।’’
দাদিমা
বললেন ‘‘ঠিক আছে, কালকে সবাই মিলে যা চাইবে তাই পাবে। এবার চল সবাইকে নিয়ে খাওয়া দাওয়া
শেষ করি।’’
দাদিমার রান্না সবারই খুব প্রিয়। ছেলেরা
একত্রে বলে উঠলে ‘‘হুরররে।’’
বিদ্যুতের
আম্মু ভন্ডূলদের সবাইকে খুব আদর করে খাওয়ালেন। অনেকদিন পর ভন্ডুলের মার কথা মনে পড়ল।
ও চুপচাপ খাওয়ার চেষ্টা করছিল।
দাদিমা বললেন ‘‘কি ব্যাপার ছেলেরা, কিছুই
তো নিচ্ছ না। নিজের মত নিয়ে খাও।’’
সবাই
খাওয়ার পর বিদায় নিয়ে যার যার বাসায় চলে গেলো।
ভন্ডূল বাসায় ফিরে দেখলো ইসমাইল সাহেব
টিভিতে খবর দেখছেন। ও চুপচাপ নিজের ঘরে
গিয়ে শুয়ে পড়ল। একটু পর ইসমাইল সাহেব এসে ওর বিছানার পাশে বসলেন। ছেলের মাথায় হাত বুলতে
বুলতে বললেন - ‘‘কি হয়েছে বাবা ভন্ডূল ? মন খারাপ কেন বাবা?’’
‘‘না,
আব্বু, বিদ্যুতের আম্মুকে দেখে অনেক দিন পর আম্মুর কথা মনে পড়ছে। তাই একটু মন খারাপ।’’
সেরাতে ইসমাইল সাহেব ভন্ডুলের সাথে অনেকক্ষণ
পর্যন্ত ওর আম্মুর গল্প করলেন। এক সময় ভন্ডূল যখন ঘুমিয়ে পড়ল তারপর তিনি নিজের কামড়ায়
ঘুমুতে গেলেন।
পরদিন
ভন্ডূলরা সবাই মাঠে মিলিত হল আলোচনা করার জন্য। সাজু একটা প্রস্তাব করল যা সব ছেলেরই
খুব পছন্দ হল।
‘‘বিদ্যুত, মনে আছে গত বছর আমরা সবাই তোদের
লঞ্চ নিয়ে নৌভ্রমনে গিয়েছিলাম তোর আব্বু আম্মুর সাথে?’’
‘‘হ্যা,
মনে আছে!’’
‘‘চল,
এবারও সবাই মিলে নৌকা ভ্রমণ করে আসি!’’ সাজুর প্রস্তাব শুনে সবাই খুশীতে লাফিয়ে উঠল।
মটকু মিন্টু বলল, ‘‘ওহ্ যা একখান খাওয়া
হইছিল গতবার। খুবই মজা পাইছিলাম।’’
যে
কোন ব্যাপারে মিন্টুর প্রথমে খাওয়ার কথা মনে পড়ে।
ছেলেরা
সবাই ওর কথা শুনে হেসে উঠল। হঠাৎ ভন্ডূল বলল, ‘‘আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে, বলবো?’’
সবাই
ভন্ডুলের আইডিয়া শুনতে আগ্রহী। ‘‘বিদ্যুত তোদের লঞ্চে নিশ্চই ড্রাইভার ও অন্যান্য স্টাফ
আছে চালানোর জন্য?’’
‘‘হ্যা,
আছে, রহমান ভাই লঞ্চ চালায় আর নিজাম ভাই উনার হেলপার, কেন?’’
‘‘আমি
ভাবছি, তোর আব্বু আম্মু যখন আমাদের পুরস্কার দিতেই চাইছেন, তাহলে আমরা এই সুযোগে সবাই
মিলে তোদের লঞ্চ নিয়ে সুন্দরবন ঘুরে আসি!’’
‘‘ওয়াও! দি আইডিয়া।’’
সাজু চিৎকার করে উঠল। অন্যরাও চিৎকার করে উঠল। কিন্তু টুটুল, নিপু ও রাসেল বলল ‘‘এত
দুর বাসা থেকে যেতে দেবে তো?’’
আরো কিছুক্ষণ আলোচনার পর ঠিক হল সবাই যার
যার বাসায় আলাপ করবে এবং বিদ্যুত ওর আব্বু আম্মুকে ওদের সাথে যেতে বলবে। এরপর দেখা
যাক কি হয়?
আসছে..... সুন্দরবন
ভ্রমন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন