বিদ্যুতের
সাথে সারাদিন
পরদিন স্কুলে বিদ্যুতের সাথে দেখা হলেও
ভন্ডুল বলল না যে, কাল ওর দাদিমার সাথে পরিচয় হয়েছে।
এভাবে পুরো সপ্তাহ স্কুল শেষ করে এল শুক্রবার।
ভন্ডুল সেজেগুজে সকালবেলা গিয়ে দাদিমার
বাসায় হাজির। গেইটের ভেতরে বাগানে দাদিমা দাড়িয়ে ছিল। ভন্ডুলকে দেখে হাসিমুখে স্বাগত
জানাল- ‘‘এসো এসো দাদুভাই।’’
দাদুভাই, সম্বোধন শুনে ভন্ডুলের খুব ভালো
লাগলো। ওর নানা বাড়ীর কথা মনে পড়ল।
দাদিমা ওকে হাত ধরে ঘরের ভেতর নিয়ে গেল।
বসার ঘরে বিদ্যুত বসে টিভি দেখছিল। দাদিমার সাথে ভন্ডুলকে ঢুকতে দেখে ভারী অবাক হয়ে
গেলো।
‘‘কি ব্যাপার ভন্ডুল তুই এখানে, আমাদের
বাড়ী চিনলি কিভাবে’’ বিদ্যুত জানতে চাইল। দাদিমা বলল ‘‘আমি
বলছি দাদুভাই এই সেই ছেলে যে আমাকে সেদিন সন্ধ্যায় বাসায় পৌছে দিয়েছিল, আমি ওর নাম
তোমাকে বলিনি আজ তোমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য।’’
‘‘ওহ্ দাদিমা! আমি ভন্ডুলকে দেখে সত্যি
অবাক হয়েছি খুব খুশিও হয়েছি।’’
‘‘ঠিক আছে, তোমরা দুজনে বসে গল্প কর আমি
নাস্তার আয়োজন করছি’’ বলে দাদিমা রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন।
সেদিনটা ভন্ডুলের খুব আনন্দে কাটলো সারাদিন
বিদ্যুতের সাথে গল্প, টিভি দেখা, দাবা খেলা। দাদিমার হাতের মজার মজার রান্না খাবার
সবকিছু মিলে অনেক দিন পর ভন্ডুল যেন নানীর বাড়ীর হৈ হুল্লোড়ের
মজা পেল। মাঝে মাঝেই ওর নানা বাড়ীর কথা মনে পড়ছিল।
সন্ধ্যার একটু আগে দাদিমার কাছ থেকে বিদায়
নিয়ে বাসায় ফিরলো ভন্ডুল।
দুই
বন্ধুর মেলায় ভ্রমন
প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শেষ। প্রতিদিন নিয়মিত
আব্বুর সাথে পড়তে বসার ফলে ভন্ডুলের পরীক্ষা খুবই ভালো হয়েছে। রেজাল্ট নিয়ে কোনও দুশ্চিন্তা
নেই।স্কুল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ। বিকালে প্রতিদিন ফুটবল খেলা হচ্ছে। তবু ভন্ডুলের
মন চাইছে পরীক্ষার পরে ছুটিটা নতুন কিছু করতে।
‘‘কি করা যায়?’’
খেলা শেষে বন্ধুদের ভন্ডুল জিজ্ঞেস করলো,
কেউ জবাব দিতে পারলোনা।
হঠাৎ বিদ্যুত বলল, ‘‘ আমি শুনেছি নন্দিপাড়ায়
মেলা বসেছে, যাই মেলা দেখে আসি।’’
কিন্তু
মেলা দেখতে যাওয়ার জন্য কারও উৎসাহ দেখা গেল না। নন্দিপাড়া অনেকদুর, কথাটা সত্যি। নন্দিপাড়া
রেলষ্টেশনের পাশে মেলা বসেছে যা ভন্ডুলদের এলাকা থেকে প্রায় ১০ কিঃ মিঃ দূরে।
ভন্ডুল বিদ্যুতের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘
চল্ , কাল আমরা দুজন মেলা দেখতে যাবো।’’
রাতে খেতে বসে ভন্ডুল আব্বুকে জিজ্ঞেস
করলো ‘‘ আব্বু , নন্দিপাড়া কিভাবে যাওয়া যায়?’’
‘‘কেন, যাবে নাকি নন্দিপাড়া ?’’
‘‘হ্যা, নন্দিপাড়ায় মেলা হচ্ছে, কাল আমি
আর বিদ্যুত দেখতে যাচ্ছি।’’
‘‘হুম, কখন যাবে?’’
‘‘সকাল বেলা’’
‘‘সকাল বেলা, কোনও সমস্যা নেই, তোমরা বাজারের
পাশে টেম্পু পাবে, টেম্পুতে ৫ টাকা নেবে নন্দিপাড়া। থামবে রেলষ্টেশনের পাশে। ওখান থেকে
কাউকে জিজ্ঞেস করলেই মেলা কোথায় দেখিয়ে দেবে।’’
পরদিন সকালে দুজন নন্দিপাড়া মেলার উদ্দেশ্যে
রওনা হল। টেম্পুতে নন্দিপাড়া রেলষ্টেশন, টেম্পু থেকে নেমে দুজনেই যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস
ফেলল।
‘‘ওরে বাপরে!’’ ভন্ডুল বলল ‘‘আমি যাওয়ার
সময় টেম্পুতে যেতে পারবো না , আমার হাড্ডিগুড্ডি সব গুড়া গুড়া হইয়া গেছে।’’
বিদ্যুতও বলল ‘‘হ্যা, বাবা, যাওয়ার সময়
অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।’’
দুজনে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আড়মোরা ভেঙ্গে
শরীর ঠিক ঠাক করে নিল। এরপর পাশের পান দোকানে জিজ্ঞেস করে জেনে নিল মেলা কোথায় হচ্ছে।
বিদ্যুত বলল ‘‘চল কোক খাই।’’
ভন্ডুল দোকানদারকে বলল দুটো কোক দিতে।
প্রচন্ড গরমের মধ্যে ঠান্ডা কোক খেতে খেতে মনে হল যেন প্রাণটা জুড়িয়ে যাচ্ছে। ভন্ডুলের
মনে হচ্ছে ওরা দুজন যেন বড় মানুষ হয়ে গেছে। একা একা বেড়াতে আসা, একা একা টেম্পুতে চড়া,
মেলায় ঘুরতে আসা, এ যেন একদিনেই অনেক বড় হয়ে যাওয়া। কোক শেষ করে দুজনে ভারিক্কি চালে
দোকানদারের নির্দেশিত পথে মেলার দিকে হাটা দিল।
সামনের চৌরাস্তার ডানে দিকের রাস্তা ধরে
কিছু দুর হাটতেই এক জায়গায় নজরে এল বিশাল সামিয়ানা। ওদের বুঝতে বাকি রইল না যে এটাই
মেলা।
দুজনেই খুব উত্তেজিত। একা একা স্বাধীনভাবে
মেলায় ঘুরতে পারবে, যা ইচ্ছে দেখতে ও চড়তে পারবে, নাগর দোলা, চর্কি, দোলনা, জাম্পিং
কত কি!!
দুজনে চটপট টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকে গেল।
ভেতরে এসে এবার দুজনের অবাক হবার পালা। বাইরে থেকে সামিয়ানা দেখে মেলাটা যত বিশাল মনে
হয় ভেতরটা এত বড় নয়। ছোট চার সিটের একটা নাগরদোলা, দুটি দোলনা, ছয় ঘোড়াওলা একটা চর্কি।
এছাড়া খেলার জন্য আর কিছু নেই।
মেলা প্রাঙ্গনে শুধু কাপড় চোপর ও অন্যান্য
জিনিষের রংবেরং এর দোকান। দুজনে একটু হতাশ হয়ে গেল।
‘‘যাই হোক, হাটতে হাটতে প্রথমে চল পুরো
মেলাটা দেখে নেই’’ বলল ভন্ডুল।
‘‘যথা আজ্ঞা, মহারাজ’’
বিদ্যুতের জবাব।
মাত্র আধ ঘন্টায় ওদের পুরো মেলা প্রাঙ্গন
দেখা শেষ হয়ে গেল। এর মধ্যে দেখার মত আছে, পুতুল নাচ আর সার্কাস। কিন্তু সার্কাস আরম্ভ
হবে সন্ধ্যায়, আর পুতুল নাচ প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় দেখায়, ওরা দুজনে পরের শোর জন্য পুতুল
নাচের টিকেট নিল।
বিদ্যুত বলল ‘‘হাতে চল্লিশ মিনিট সময় আছে, চল্ নাগর দোলায়
চড়ি।’’
এবার ভন্ডুল বলল ‘'জো হুমুক, জাহাপনা।’’
তারপর দুজনেই একসাথে হেসে উঠলো।
ওরা গিয়ে নাগর দোলায় চড়ল, ঘুর্ণিতে চড়ল,
কিন্তু দোলনায় উঠতে ইচ্ছেহল না। ওরা লক্ষ্য করেছে ওদের চেয়ে অনেক ছোট বাচ্চারা দোলনায় চড়ছে !
ঘুর্নি শেষ করে দুজনে গিয়ে বসল পুতুল নাচের
পাশের চটপটির দোকানে। চটপটি খেতে খেতে পুতুল নাচের সময় হয় গেল। দুজনে ঝটপট গিয়ে ঢুকলো
পুতুল নাচের ঘরে।
পুতুল নাচের ঘরটা চারদিক থেকে সমিয়ানা
ঢাকা। এর ভেতরে মাঠে চট বিছিয়ে মানুষ বসে আছে। ওরা ভেবেছিল ভেতরে চেয়ার থাকবে। দুজনে
একেবারে সবার সামনে গিয়ে বসল।
পেছনে
বেশীর ভাগই বড় মানুষ, দুই কিশোরকে সামনে বসতে দেখে কেউ আর বাধা দিল না। সামনে বড় একটা
টিভির মত দেখতে মঞ্চ। কিছুক্ষণ পর ঐ মঞ্চে শুরু হল পুতুল নাচ।
পুতুল নাচ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই ভন্ডুল
ও বিদ্যুতের হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাওয়ার অবস্থা হল। আসলে এই ঘরের ভেতর সবারই তখন হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ। পুতুল নাচে
চরিত্রগুলো খুব মজার। আর হাটা চলা, বসার ভঙ্গি, দাড়ানো সবই খুব হাস্যকর। পুতুল
নাচের পুরো এক ঘন্টা ওদের খুব মজায় কাটলো।
পুতুল নাচের ঘর থেকে বেড়িয়ে একজন আরেকজনের
দিকে ভ্র কুচকে তাকলো।
‘‘এখন? মেলা তো ঘুরা শেষ! এখন কি করব ?
’’ বিদ্যুত জিজ্ঞেস করল।
‘‘কি আর করা চল ফিরে যাই। কিন্তু টেম্পুতে
আর ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না, কি করা যায় বলত?
‘‘এক কাজ করি চল’’
বিদ্যুত বুদ্ধি দিল, ‘‘রেলষ্টেশনের কাছে গিয়ে কোনও হোটেলে প্রথমে দুজনে ভাত খাই, এরপর
রেললাইন ধরে হাটতে হাটতে দুজনে চলে যাই বাসায়। কি বলিস ? ’’
‘‘রেললাইন ধরে হাটলে আমাদের এলাকাটায় যাওয়া
যাবে ? কই আমি তো কোনও রেললাইন দেখিনি, তবে ট্রেনের শব্দ শুনেছি। ’’
‘‘ ঠিকই শুনেছিস, তোদের বাসার পাশে যে
মাঠটা আছে ওর পিছনে যে জঙ্গল, তার পেছনেই রেললাইন। জঙ্গলের জন্য তোরা ট্রেন দেখতে পাড়িস
না। ’’
‘‘কিন্তু আমাদের বাসার পেছন থেকে ট্রেন
দেখা যায়। ’’
‘‘রেললাইন ধরে হেটে গেলে তোদের বাসা চিনতে
পারবি? ’’ ভন্ডুল জানতে চাইলো।
‘‘ মনে হয় পারবো, আমাদের বাসার পাশে একটা
বিশাল বটগাছ আছে। ওটা অনেক দূর থেকে দেখা যায়। ’’
‘‘ ঠিক আছে চল, খেয়ে দেয়ে ঠিক করা যাবে,
হেটে যাবো না টেম্পুতে যাবো। ’’
ট্রেন
এক্সিডেন্ট থেকে রক্ষা
রেল ষ্টেশনের পাশেই “হোটেল আপ্যায়ণ”, দুজনে
ঐ হোটেলেই ঢুকল।
ভন্ডুল বলল ‘‘আমি খাবো পরোটা মাংস, তুই?’’
‘‘আমিও তাই’’
বিদ্যুতেরও পরোটা মাংস পছন্দ।
খেতে খেতে ঠিক হল, ওরা রেললাইনের উপর দিয়ে
হেটে যাবে। এখন বাজে দুইটা, আড়াইটায় রওনা হলেও সাড়ে পাচটা ছয়টায় তালতলা পৌছে যাওয়া
যাবে।
ভরপেট পরোটা মাংস খেয়ে দুই বন্ধু বেরুল
হোটেল আপ্যায়ণ থেকে।
‘‘চল রেলষ্টেশনের ভেতরে ঢুকি,’’ ভন্ডুল
প্রস্তাব করল।
রেলষ্ট্রেশনটা ছোটখাট। লোকাল ট্রেন নির্দিষ্ট
সময়ে থামে। মালগাড়ীও আসা যাওয়া আছে।
টাইম টেবিলে দেখা যাচ্ছে লোকাল ট্রেন আসবে
সাড়ে পাঁচটায়। স্টেশনের ভেতরে এখন কোন ভীড় নেই। প্রায় ফাকা, দুএকটা ভিক্ষুক ছাড়া আর
কেউ নেই। মনে হয় পুরা ষ্টেশনটাই ঘুমাচ্ছে। ভাব দেখে ওদেরও ইচ্ছেহল কোন সিটে শুয়ে ঘুম
দেয়। ষ্টেশনের লোহার চেয়ারে বসতেই চোখে ঘুম জড়িয়ে আসছে।
দুজনে কিছুক্ষণ চেয়ারে বসে ঝিমোলো। হঠাৎ
ভন্ডুল লাফ দিয়ে উঠলো, ‘ এ্যাই, আমাদের তালতলা ফিরতে কমপক্ষে দুই আড়াই ঘন্টা লাগবে,
এক্ষুনি রওনা না হলে সন্ধ্যার আগে পৌছানো যাবে না । চল রওনা হই। ’’
বিদ্যুত ও এক লাফে উঠে দাড়ালো- ‘জো হুকুম,
মহারাজ!’
রেল লাইনের উপর দিয়ে দুজনে হাটতে শুরু
করল। একজন আরেক জনের হাত ধরে দুই লাইনের উপর পা ফেলে এ যেন সার্কাস খেলা, দুজনেই বেশ
মজা পেয়ে গেলো।
কখনও জোড়ে হাটলো, কখনও হালকা পায়ে হাটা,
কখনও বা দৌড়ে চলার চেষ্টা। ক্লান্ত হলে কোথাও রেললাইনের উপর বসেই বিস্রাম নিল ওরা।
এভাবে কোথা দিয়ে সময় চলে গেল ওরা বলতেই পারবে না। দুই পাশের গাছ পালা ক্ষেত নালার সৌন্দর্য
দেখতে দেখতে ওরা তালতলার কাছাকাছি এসে গেল।
হঠাৎ বিদ্যুত অবাক হয়ে বলল ‘‘বাহ্ পৌছে
গেলাম এত তারাতাড়ি’’
মনে
হচ্ছে এক দৌড়েই বটগাছটার কাছে পৌছে যাওয়া যাবে। দুজনে হঠাৎ একটা দৌড় দিল। দৌড়ে ওরা
যখন প্রায় বটগাছের কাছে এসে গেল ভন্ডুল হঠাৎ থমকে দাড়ালো। দেখা দেখি বিদ্যুতও দাড়ালো।
‘‘কি ব্যাপার, দাড়িয়ে পরলি যে!’’
ভন্ডুল হাতের ইশরায় সামনে দেখালো। বিদ্যুত
তাকিয়ে দেখলো বটগাছটা থেকে প্রায় ৫০০ গজ সামনে কিছু লোক হাতে শাবল কোদাল নিয়ে কি যেন
করছে। ভন্ডুল ওকে হাতের ইশারায় চুপ থাকতে বলে আস্তে করে রেল লাইন থেকে নেমে জঙ্গলের
দিকে চলে গেলো। পিছন পিছন বিদ্যুতও এল।
বিদ্যুত বলল, ‘‘ কি ব্যাপার? লুকিয়ে পরলি
কেন? ’’
ভন্ডুল
প্রায় ফিস ফিস করে বলল, ‘‘ লোকগুলোর ভাবভঙ্গি ভালো মনে হচ্ছেনা। আর এদের কেউ রেল কর্মিও
মনে হচ্ছেনা। তাইলে এতগুলো লোক এখানে জঙ্গলের পেছনে কি করছে? ’’
‘‘ হুম ’’ বিদ্যুত ও সায় দিল ‘‘ চল সামনে
এগিয়ে দেখি। ’’
‘‘ দাড়া, ’’ ভন্ডুল বলল, ‘‘ সাবধানে দেখতে
হবে, লোকগুলো যেন আমাদের না দেখে ! ’’
দুজনে জঙ্গলের ভেতর থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে
যেতে লাগলো, লোকগুলো যখন আর মাত্র ১০০ গজ সামনে তখন ওরা থামলো।
দুজনের মাঝে খুব উত্তেজনা।
হঠাৎ লোকগুলো ওদের দিকে তাকালো। ভন্ডুল
ভাবলো, হায় হায় ওরা কি আমাদের দেখে ফেলেছে!
বিদ্যুতকে ইশারা করল দাড়াতে। দুজনে গাছের
আড়ালে একদম ফ্রিজ হয়ে দাড়িয়ে রইল।
লোকগুলো আসলে ওদের দেখছিল না, চারিদিকে
তাকিয়ে দেখছিল। হঠাৎ ওরা সবাই শাবল, কোদাল, গাইতি নিয়ে উঠে দাড়ালো। হাতের যন্ত্রপাতি
নিয়ে তারাহুড়া করে সবাই উল্টা দিকের জঙ্গলে ঢুকে গেলো। যেতে যেতে লোকগুলো ঘড়ির দিকে
তাকালো। দুজনে চুপচাপ ওদের চলে যাওয়া দেখলো। তারপরও প্রায় পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করল ওরা।
উকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করল লোকগুলোকে আর দেখা যায় কিনা। কিন্তু মনে হল সবাই দ্রুত হেঁটে
দুরে কোথাও চলে গেছে! আস্তে আস্তে ভন্ডুল ও বিদ্যুত জঙ্গল থেকে বেরিয়ে রেল লাইনের উপর
দাড়াল। কিছুক্ষণ সেখানেই দাড়িয়ে রইল।
লোকগুলো আবার দুর থেকে দেখছে না তো !
যখন মনে হল কেউ ওদেরকে দেখছে না, তখন এক
দৌড়ে লোকগুলো যেখানে রেল লাইনের উপর কাজ করছিল সেখানে চলে আসলো।
হায়, হায় এত বড় গর্ত কেন এখানে ! দুই পাশের
রেললাইনের পাত সরানো ! এযে বিশাল গর্ত ! প্রায় দুই ফুট গর্ত লম্বায় প্রায় পনের ফুট
!
হঠাৎ ভন্ডুল ঘড়ির দিকে তাকালো, পাঁচটা
আটাশ বাজে।
‘‘বিদ্যুত!’’ চিৎকার করে উঠল ভন্ডুল।
‘‘কি!’’ বিদ্যুত চমকে ওর দিকে তাকালো।
‘‘সাড়ে পাচটায় একটা ট্রেন আসার কথা। আমি
ষ্টেশনে টাইম টেবিলে দেখেছিলাম! ’’ বলল ও
‘‘আয় হায় তাহলে তো ট্রেন এক্সিডেন্ট হবে!
’’ বিদ্যুত ভয় পেয়ে গেলো।
ভন্ডুল বলল, ‘‘এক্ষনি কিছু একটা করতে হবে।
না হলে এক্সিডেন্ট ঠেকানো যাবে না । ’’
‘‘কি করব আমরা’’
বিদ্যুত জানতে চাইল।
আবার ঘড়ির দিকে তাকালো ভন্ডুল। পাঁচটা
ঊনত্রিশ সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।
সামনের বটগাছটা দেখিয়ে ভন্ডুল বলল ‘‘ওটার
পেছনেই তোদের বাসা ? ’’
‘‘হ্যা, আমি ছোট মামার সাথে আগেও রেললাইন
দিয়ে নন্দিপাড়া থেকে হেটে এসেছি। আমি জানি ওটার পেছনেই আমাদের বাসা। কিন্তু কেন?
’’
‘‘তুই এক দৌড়ে তোদের বাসার পাশ দিয়ে আমাদের
খেলার মাঠে পৌছাতে পারবি? কতক্ষণ লাগবে যেতে আসতে? ’’
‘‘কমপক্ষে পনের মিনিট তো লাগবেই, ’’ বিদ্যুত
বলল, ‘‘কিন্তু কেন? ’’
‘‘এখন এত কথা বলার সময় না, আমি এখানে দাড়াচ্ছিতুই
এক দৌড়ে মাঠে গিয়ে... না থাক,তোদের বাসায় যা, দাদিমাকে বলে একটা লাল শাড়ী অথবা লাল
কাপড় নিয়ে চলে আয়। ’’
ট্রেন
এক্সিডেন্টের কথা ভেবে ভন্ডুলের গলা শুকিয়ে গেল।
‘‘লাল কাপড়ে কি হবে !’’
‘‘আরে বোকা, ট্রেন থামাতে হবে, এরজন্য
লাল পতাকা অথবা লাল কাপড় চাই। যদি থাকে একটা লাঠিও নিয়ে আসিস।’’
‘‘তুই এখানে একা থাকবি, যদি লোকগুলো আবার
আসে? ’’
‘‘আসবে না, যদি আশে পাশে থাকতো তাহলে এতক্ষণে
আমাদের ধরে ফেলতো‘‘ ভন্ডুল তাড়া দিল ‘‘তুই জলদি যা তো, লাল
কাপড় নিয়ে আয় যেখান থেকে পারিস। ’’
ভন্ডুলকে রেখে বিদ্যুত এক দৌড়ে বটগাছটার
পেছনে হারিয়ে গেল।
ঘড়ির দিকে তাকালো ভন্ডুল, পাচটা তেত্রিশ!
আল্লাহ ! যদি সাড়ে পাচটায় নন্দিপাড়া থেকে ছাড়ে তাহলে এখানে পৌছতে
কত সময় লাগবে। দুরত্ব প্রায় দশ কিঃ মিঃ। ট্রেনের স্পিড ঘন্টায় কত কিঃ মিঃ হয়! আল্লাহ,
আজকে যেন ট্রেনটা লেট হয় ! আল্লাহ মাবুদ, ট্রেনটা লেইট করে দাও। আল্লাহ, তুমি ট্রেটা
লেট করে দাও!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন