বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০

ভন্ডূল - ট্রেন এক্সিডেন্ট থেকে রক্ষা


ট্রেন এক্সিডেন্ট থেকে রক্ষা



ঘড়ির দিকে তাকালো ভন্ডুল, পাচটা তেত্রিশ! আল্লাহ ! যদি সাড়ে পাচটায় নন্দিপাড়া থেকে ছাড়ে তাহলে এখানে পৌছতে কত সময় লাগবে। দুরত্ব প্রায় দশ কিঃ মিঃ। ট্রেনের স্পিড ঘন্টায় কত কিঃ মিঃ হয়! আল্লাহ, আজকে যেন ট্রেনটা লেট হয় ! আল্লাহ মাবুদ, ট্রেনটা লেইট করে দাও। আল্লাহ, তুমি ট্রেটা লেট করে দাও!
            একা দাড়িয়ে থাকতে ভন্ডুলের ভয়ও লাগছে। যদি লোকগুলো আবার আসে !
            ‘‘কুউউ ..’’হঠাৎ দূরে শোনা গেল ট্রেনের হুইসেলের শব্দ। আল্লাহ ট্রেন দেখি আইসা পরছে! আল্লাহই জানে কোন দিকে থেকে আসছে। সামনে পেছনে কোথাও ট্রেনের দেখা নেই কিন্তু হুইসেল শোনা যাচ্ছে। হঠাৎ ভন্ডুল দেখলো ওর গায়ের সার্টটার রং মেরুন। দর থেকে লাল মনে হতে পারে। ও শার্টটা খুলে হাতে নিয়ে পাগলের মত নাড়তে লাগলো।
            ‘‘কুউউ ......’’ আবার ট্রেনের হুইসেল শোনা গেল।
            ভন্ডুল সামনে পেছনে তাকিয়ে হাত দিয়ে সাটটা পতাকার মত নাড়তে লাগলো। বিদ্যুত এত দেরী করছে কেন। একটা লাল কাপড় পেল না।
            হঠাৎ দেখলো পেছনে ট্রেনের ইঞ্জিন দেখা যাচ্ছে। দুরত্ব মাত্র আধ মাইল। হায় আল্লাহ, এখন কি হবে! ট্রেনতো খুব স্পিডেই আসছে! ওরা আমার সার্টটা দেখতে পাচ্ছেতো। ট্রেন থামাবে তো?
            ‘‘বিদ্যুত!!’’ ভন্ডুল ভয়ে চিৎকার করে উঠল, ‘‘বিদ্যুত!!’’
            যেন ওর চিৎকারের জবাবেই বটগাছের পেছন থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে এল বিদ্যুত হাতে একটা লম্বা লাঠিতে লাল কাপড় বাঁধা।
            বিদ্যুতের পেছনে ট্রেনটাকে খুব স্পিডে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। ভন্ডুলও দৌড়ে বিদ্যুতের কাছে গেল। দুজনে লাঠি ধরে ডানে বায়ে জোড়ে জোড়ে লাল পতাকা নাড়তে লাগলো।
পেছন থেকে ট্রেনটা তখনও এগিয়ে আসছে। স্পিড কমার কোনও লক্ষন নেই।
            ওরা দুজনে তখন লাল পতাকা নাড়ছে আর আল্লাহ কে ডাকছে। আল্লাহ্ তুমি বাচাও। হঠাৎ রেললাইনে চাকা ঘষার আওয়াজ পাওয়া গেল। আস্তে করে ট্রেনের গতি কমে গেল। ধীরে ধীরে গতি আরোও কমছে। এদিকে বিদ্যুত ভন্ডুল দুজনেই ভয়ে অথবা পরিশ্রমে একদম ঘেমে গেছে। দুজনেই স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে দেখলো ট্রেনটা থামছে।
            তখনও ওরা এক নাগাড়ে পতাকা নেড়েই যাছছ।
            ধীরে ধীরে ট্রেনটা ওদের দুইশ গজের মধ্যে এসে থামলো।
            দুজনে পতাকা নিয়ে ট্রেনের দিকে দৌড়ে গেল। এদিকে ট্রেনের দুই পাশের জানালা দিয়ে কয়েকশ যাত্রী মাথা বের করে কৌতুহলে তাকিয়ে আছে।
            এখানে ট্রেন থামাচ্ছে কেন ?
            ইঞ্জিন রুমের দরজা খুলে ট্রেনের ড্রাইভার বেরিয়ে এল। অবাক হয়ে দেখছে দুটি কিশোর লাল পতাকা হাতে ট্রেনের দিকে দৌড়ে আসছে।
            ‘‘এই ছেলেরা,’’ ড্রাইভার চিৎকার করে জানতে চাইল, ‘‘  কি হয়েছে ট্রেন থামিয়েছো কেন?’’
            ‘‘সামনে বিশাল গর্ত এবং রেল লাইন কাটা। ট্রেন না থামালে এক্সিডেন্ট হত। আপনি নিচে এসে দেখে যান ’’ ভন্ডুল চিৎকার করে বলল।
            এরমধ্যে প্রায় বিশ পচিশ জন কৌতুহলী লোক ট্রেন থেকে নেমে এসেছে। একজন সাদা পোশাক পড়া টিটিও আছে।
            ড্রাইভার নিচে নেমে এল।
            সবাই মিলে লাল পাতাকা হাতের দুই কিশোরকে ঘিরে দাড়ালো।
            একজন বয়স্ক টি টি এসে ভন্ডুলের কাধে হাত রাখলো। তিনি লক্ষ করলেন ছেলেটার মুখ উত্তেজনায় লাল হয়ে গেছে।
            একজন খালি গায়, একজনের সার্ট ঘামে ভিজে গেছে।
            ‘‘কি হয়েছে বাবা’’ তিনি জানতে চাইলেন, ‘‘ ট্রেন থাকিয়েছো কেন?’’
ভন্ডুল হাতের ইশরায় সামনের গর্তটা দেখালো। সবাই এক সাথে ওদিকে তাকালো। কয়েকজন দৌড়ে কাছে চলে গেল। বয়স্ক রেল কর্মকর্তা ভন্ডুলের হাত ধরে গর্তটার দিকে হেটে এগুলেন।
            সবাই বিশাল গর্ত আর রেললাইন কাটা দেখে বুঝতে পারল, ছেলে দুটো আজ কত বড় ট্রেন এক্সিডেন্ট থেকে ওদের বাচিয়েছে ! একজন ভন্ডুলের সার্টটা কুড়িয়ে এনে দিল।
            ট্রেনের ড্রাইভার দুই হাতে জড়িয়ে ধরল ভন্ডুল আর বিদ্যুতকে,‘‘বাবারা। কি বিরাট এক্সিডেন্ট থেইক্যা যে তোমরা আইজ আমাগো বাচাইলা ,তা বইলা বোঝানো যাইবো না। আল্লাহ্ তোমাগো ভালো করুক।’’
            এরপর সবাই এক সাথে কথা বলা শুরু করল। হৈ চৈ চিৎকারে কারো কথাই বোঝা যায় না। বয়স্ক কর্মকর্তা সবাইকে থামতে বললেন, ‘‘  আপনারা সবাই চুপ করেন, আর ট্রেনের ভেতরে গিয়ে বসেন প্লিজ। এই এলাকাটা ভালো না। চুরি ডাকাতি হতে পারে। সবাই গিয়ে যার যার সিটে বসে থাকেন।’’
            চুরি ডাকাতির কথা শুনে কয়েকজন লোক যার যার কামড়ায় ফিরে গেল। বেশীর ভাগ লোকই কৌতুহলে থেকে গেল।
            ‘‘বাবা, ঘটনা কি বলত, তোমরা এই জঙ্গলের দিকে কিভাবে গর্ত খুজে পেলে বয়স্ক কর্মকর্তা ভন্ডুলের কাছে জানতে চাইলেন।
            ভন্ডুল ও বিদ্যুত তখন কিছুটা ধাতস্থ হয়েছে। ভন্ডুল ওকে দুর থেকে লোকগুলোকে শাবল গাইতি নিয়ে কিছু করতে দেখা ও বিস্তারিত খুলে বলল।
            ড্রাইভার বলল, ‘‘ তুমি যখন তোমার সার্ট হাতে নিয়া নাড়তে ছিলা, আমি তখনও ট্রেনের স্পিড কমাই নাই, ভাবছিলাম, দুষ্ট ছেলে মশকরা করে। কিন্তু যখন তোমরা দুইজনে মিললা লাল বড় কাপড়ে পতাকা নাড়লা, আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই কোন সমস্যা হইছে! তাই থামাইছি। ভাগ্যিস থামাইছিলাম।’’
            ইতিমধ্যে ভীরের মধ্যে থেকে এক লোক বেরিয়ে এল, লোকটার কাধে ক্যামেরা। ভদ্রলোক ফটাফট ভন্ডুল ও বিদ্যুতের ছবি তুলতে লাগলেন। সবাই মিলে হৈ চৈ করতে করতে ভন্ডুল ও বিদ্যুতকে কাধে তুলে নাচতে লাগলো।এরপর ভদ্রলোক ট্রেন লাইনের কাটা ও গর্তটার ছবি তুললেন।
পরে জানা গেল, ভদ্রলোক দৈনিক ‘‘ প্রথম আলো”র ফটো সাংবাদিক। তিনি ওদেরকে প্রশ্ন করে বিস্তারিত ঘটনা জেনে নিলেন।
            এরমধ্যে কর্মকর্তা মোবাইলে নন্দিপাড়া রেলষ্টেশনের সাথে যোগাযোগ করলেন। এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা নিলেন।
            ভন্ডুল ও বিদ্যুত বলল, ‘‘ আংকেল আমরা তাহলে আসি। ’’
            কর্মকর্তা বললেন, ‘‘ আরে না, তোমরা যাবে কোথায়। আমরা তোমাদের পৌছে দেব। তোমরা হচ্ছ আজকের ঘটনার হিরো। তোমাদের বাসায় যাবো আমি। তোমাদের বাবা মার সাথে পরিচিত হব। একটু দাড়াও, ’’ বলে তিনি ট্রেন থেকে নেমে আসা বিডিআর ও পুলিশ দের সাথে কথা বললেন কিছুক্ষণ। তারপর ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন ‘‘চল তোমাদের বাসায় যাবো, এখানে লাইন ঠিক হতে কম পক্ষে একদেড় ঘন্টা লাগবে। ’’

স্কুলের সম্বর্ধনা ও দৈনিক প্রতিকায় ছবি

            পরদিন সকালে ভন্ডুলের বাবার সাথে ও যখন ভোর বেলা মাঠে দৌড় ঝাপ করছে তখন কাগজওলা এসে দরজার নিচে দিয়ে প্রত্রিকা দিয়ে গেল। মাঠ থেকে ফিরে হাত মুখ ধুয়ে ভন্ডুল যখন পড়তে বসেছে আব্বু এসে ভন্ডুলকে প্রত্রিকাটা দেখালেন।
            ‘‘ভন্ডুল দেখ, কালকে ট্রেনের এক্সিডেন্ট থেকে বাচার খবরটা তোদের ছবিসহ প্রথম আলো প্রত্রিকায় ছাপিয়েছে। ’’
            ‘‘কি বল আব্বু! সত্যি! ’’ ভন্ডুল উৎসুক হয়ে তাকালো।
            আব্বু প্রত্রিকাটা ওর দিকে এদিয়ে দিলেন।
            সত্যি ছবি ছেপেছে ওদের। ছবিতে ভন্ডুল ও বিদ্যুত সবার কাধের উপরে।
            প্রত্রিকার শেষ পাতায় খবরটা ছেপেছে।

‘‘দুই কিশোরের উপস্থিত বুদ্ধিতে ট্রেন এক্সিডেন্ট থেকে রক্ষা’’
      গতকাল তালতলার দুই কিশোরের চমৎকার উপস্থিত বুদ্ধিতে এক বিশাল প্রাণঘাতী ট্রেন এক্সিডেন্ট থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও তার প্রায় ৪০০ যাত্রী। ট্রেনটিতে বিজেএমইএ আয়োজিত আনন্দ ভ্রমনে যাচ্ছিল প্রায় তিনশত গার্মেন্টেস এর কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর। আনন্দ ভ্রমণে ‘‘প্রথম আলো’’ বাণিজ্য সংবাদের প্রধান সংবাদদাতা ছিলেন। তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। গতকাল বিকাল সাড়ে পাচটায় ---গামী ‘‘-­- এক্সেপ্রেস’’ যখন সেরপুর জেলার নন্দিপাড়া ষ্টেশনে পেড়িয়ে তালতলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন ট্রেনের গতি ছিল ঘন্টায় ৭০ কিঃ মিঃ। হঠাৎ ট্রেনের চালক দেখতে পায় প্রায় আধ কিঃ মিঃ দূরে দুটি কিশোর ছেলে রেললাইনের উপর দাড়িয়ে লাল পতাকা নাড়ছে। তখন তিনি ট্রেনের গতিরোধ করে ট্রেনটি থামানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরে দেখা যায়, তালতলার পাশ দিয়ে যাওয়া রেল লাইনে দুঃস্কৃতিকারীরা লাইন কেটে বিশাল গর্ত করে রেখেছে। যদি দুই কিশোর ট্রেনটি না থামাতো তাহলে ব্যাপক জানমাল তথা বাংলাদেশ রেলওয়ের বিশাল ক্ষতির সম্মুখিন হত। ত্রানকর্তা দুই কিশোরের পরিচয় মইনুল হোসেন, ভন্ডুল ও সামসুল আরেফিন, বিদ্যুত। বিদ্যুতের বক্তব্য অনুযায়ী দুই বন্ধু নন্দিপাড়া ষ্টেশনের কাছে মেলা দেখে যখন রেল লাইনের উপর দিয়ে হেটে বাড়ী ফিরছিল ওরা কিছু লোককে শাবল ও গাইতি নিয়ে রেল লাইনের উপর কর্মরত দেখতে পায়। লুকিয়ে লুকিয়ে ওরা ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করে এবং লোকগুলো যখন কাজ শেষ করে চলে যায় ওরা কৌতুহল বশত এগিয়ে গিয়ে দেখতে পায় রেললাইন কাটা এবং একটি বিশাল গর্ত। ভন্ডুল বিদ্যুতকে ওর বাড়ী থেকে একটি লাল কাপড় আনতে বলে এবং দুজনের উপস্থিত বুদ্ধিতে রক্ষা পেল একটি বিশাল ট্রেন দূর্ঘটনা। সার্থক নাম ভন্ডুলের। ছোট্ট কিশোর দুঃকৃতিকারীদের পরিকল্পনা পুরেপুরি ভন্ডুল করে দিয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তালতলা এলাকা ও তার আশে পাশে পুলিশ ও র‌্যাব ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছেদুঃকৃতিকারীদের খোঁজে।
            ‘‘ও আল্লাহ্ কি দারুন ব্যাপার, আব্বু!’’ ভন্ডুল বলল,‘‘প্রথম আলোতে আমাদের দুজনের ছবি দিয়েছে! আবার খবরটা কত সুন্দর করে ছেপেছে দেখেছো! ’’
            ভন্ডুল তার উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারছে না।
            ইসমাইল সাহেব বলল ‘‘তোরা তো হিরো হয়ে গেলিরে ,ভন্ডুল!’’
            এর পর নাস্তা করে ভন্ডুল যখন স্কুলে যাচ্ছে ,আব্বু বললেন ‘‘পত্রিকাটা নিয়ে যা, বিদ্যুতকে দেখাতে পারবি।’’
            ‘‘ওহ্ ,থ্যাংক ইউ আব্বু, আমি আনন্দের চোটে ভুলেই গিয়েছিলাম।’’
            স্কুলের গেটের কাছে আসতেই দেখা গেলো ওর ক্লাশের কয়েকজন বন্ধু অপেক্ষা করছে।
            ওরা বলল, ‘‘আয়, হায়, ভন্ডুল ,আমরা যে কেন তোদের সাথে মেলা দেখতে গেলাম না ! আমরা সবাই থাকলে কত মজা হত! তোরা দুজনেই সব মজা করে ফেললি। কত বড় ট্রেন এক্সিডেন্ট থেকে বাচিয়ে দিলি। ইস আমরা যদি তোদের সাথে থাকতাম....’’
            ভন্ডুল সবার দিকে তাকিয়ে হাসছিল। ও বলল ‘‘তোরা তো কেউ যেতে চাইলি না মেলায়। তোরা সবাই থাকলে হয়ত শয়তান লোকগুলোকে ধরতে পারতাম।’’
            সবাই একসাথে বলল ‘‘এরপর থেকে যে কোন এডভেনচারে তোর সাথে আমরা আছি।’’
            ‘‘আচ্ছ্বা, দেখা যাবে।’’
            হঠাৎ ভন্ডুল প্রশ্ন করল ‘‘তোরা কিভাবে জানলি যে আমরাই ট্রেন এক্সিডেন্ট রক্ষা করেছি?’’
            ‘‘আয়, হায়, এটা কি তালতলার কারো জানতে বাকি আছে নাকি! কাল রাতেই তো সবাই এ ব্যাপারে বলাবলি করছিল। ’’
            সবাই বলছিল, ‘‘ভন্ডুল আর বিদ্যুত একটা চমৎকার কাজ করেছে। শুনে শুনে আমার খুব হিংসাও হচ্ছিল আবার তোদের জন্য গর্বও হচ্ছিল ’’ বলল ভন্ডুলের ক্লাসের ফাষ্টবয় সাজু।
            সত্যি তাই, গতকাল রেলকর্ম কর্তার সাথে পরে স্থানীয় পুলিশ অফিসারও বিদ্যুত ও ভন্ডুলের বাসায় গিয়ে ওদের দাদিমা ও আব্বুর কাছে ওদের খুব প্রসংসা করেছেন। ইতিমধ্যে থেমে থাকা ট্রেন দেখতে আসা লোকজনের মুখে মুখে সারা এলাকার লোকজন এমনকি ওদের স্কুলের হেড স্যারও ঘটনা জেনে খুব খুশি হয়েছেন।
            বন্ধুদের নিয়ে ভন্ডুল ক্লাস রুমে স্কুল ব্যাগ রাখতে গিয়ে দেখলো বিদ্যুত ওর পাশের সিটে বসে আছে। ব্যাগ থেকে বের করে প্রত্রিকার ছবি বিদ্যুতকে দেখালো ভন্ডুল।
            ছবি দেখে বিদ্যুত হতবাক হয়ে গেলো।
            সবাই মিলে প্রত্রিকার খবরটা আবার পড়ল ওরা। ভন্ডুল ও বিদ্যুতকে নিয়ে ক্লাসরুমে একটা হৈ চৈ শুরু হয়ে গেলো।
            কিছুক্ষণ পর ঘন্টা পড়তেই সবাই গিয়ে লাইন ধরে স্কুলের মাঠে ড্রিল ক্লাশের জন্য দাড়ালো। স্যারেরা সবাই ওদের সামনের ক্লাস রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে আছেন। জাতীয় সংগীত শেষ হওয়ার পর কিছুক্ষণ ড্রিল ক্লাশ হয়, এরপর দোয়া। কিন্তু আজ জাতীয় সংগীত শেষ হতেই হেড স্যার অন্য স্যারদের থেকে একটু সামনে এসে দাড়ালেন। ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে বললেন ,‘‘সপ্তম শ্রেণীর মইনুল হোসেন ও সামসুল আরেফিন এখানে আমার সামনে এসো।’’
            ভন্ডুল ও বিদ্যুত নিজেদের নাম শুনে চমকে উঠল! একজন আরেকজনের দিকে তাকাতে তাকাতে হেড স্যারের পাশে গিয়ে সালাম দিল। হেড স্যার দুহাত বাড়িয়ে ওদের কাধে হাত দিয়ে কাছে টেনে নিলেন। তারপর মাঠে দাড়ানো ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘প্রাণপ্রিয় ছাত্ররা আমার, তোমরা এই দুজন ছেলেকে চিনে নাও। আশা করি তোমরা সবাই এদের গতকালের কৃতিত্বের কথা শুনেছো। ওরা দুজন উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে কি চমৎকার ভাবে একটি বিরাট ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করেছে। ওরা আমাদের এলাকায় সম্মান বাড়িয়েছে। ওরা আমাদের স্কুলের সম্মান বাড়িয়েছে। আমি আশা করব তোমরা স্কুলের সকল ক্লাশের ছাত্ররা এই উপস্থিত বুদ্ধির চর্চা করবে। এবং ভবিষ্যতে আমাদের এলাকা তথা দেশের সম্মান বৃদ্ধি করবে। আমি এই দুই কৃতি ছাত্রের জন্য অন্তর থেকে দোয়া করছি’’ এই বলে হেড স্যার ভন্ডুল ও বিদ্যুতের মাথায় হাত রাখলেন।
            ঘটনা দেখে ও স্যারের কথা শুনে ওদের একটু লজ্জা লজ্জা লাগলেও ভেতরে ভেতরে ভালোও লাগছিল।
            এরপর যথারিতি ড্রিল ক্লাস শেষে দোয়ার পর ছাত্ররা যে যার ক্লাসে চলে গেলো। স্কুলের সকল ক্লাস তার রুটিন মতই চলতে লাগলো কিন্তু সব ক্লাসেই সেদিন মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ওদের স্কুলের ছাত্র ভন্ডুল ও বিদ্যুত !

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন